2013-12-19

বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কিছু নেই

 
 ঢাকা:যুদ্ধাপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাংলাদেশীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তারা চেয়েছেন এ শাস্তির পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ড। এটাই বাংলাদেশে জনপ্রিয় দাবি। ঘটনা যদি তা-ও না হয় তাহলেও এটা পাকিস্তানের কোন বিষয়ই নয়। এ নিয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কিছু নেই। গতকাল পাকিস্তানের দ্য নেশন পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, জাতি হিসেবে পাকিস্তানিরা অভিযুক্ত খুনি ও ধর্ষককে বীর হিসেবে মেনে নেয়ার পক্ষে নয়।


এতে বলা হয়, আমাদেরকে বিব্রত করবেন না। ‘রেজ্যুলুটলি সাপোর্টিং রং’ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, দেখা যাচ্ছে যে, বেশ কিছু ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক নেতা কঠিন সমস্যার মুখে পড়েছেন। তাদের সবার হয়তো যৎকিঞ্চিৎ সহায়তা প্রয়োজন। আর সে জন্যই তাদেরকে বলা যায় এখন আর পূর্ব পাকিস্তান নেই। এর পরিবর্তে সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ নামের দেশটি। এখানে বসবাস বাঙালিদের।


এখানে আগের অথবা পরবর্তী সময়ের কোন পাকিস্তানি নেই। আছে শুধু বাঙালিরা। যারা পূর্ব পাকিস্তানের ধারণায় বিশ্বাস করেন তাদের জন্য একটি অমোঘ সত্য বার বার জানিয়ে দেয়ার দরকার নেই। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বাংলাদেশে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়ার পর যে প্রস্তাব আনা হয়েছে তাদেরকে সেদিকে সংক্ষেপে নজর দেয়ার অনুরোধ করা হলো। দৃশ্যত, ৪৪ বছর আগে হতাশার মধ্য দিয়ে যে ভাঙন হয়েছে তা ভুলে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বক্তব্য রাখার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান দাবি করেছেন, কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে পাকিস্তানকে সমর্থন করার কারণে এবং তিনি ছিলেন একীভূত পাকিস্তানের পক্ষে এ কথাই সত্য। তিনি আরও দাবি করেছেন, জামায়াতে ইসলামীর এ নেতাকে ফাঁসি দেয়ার কারণে জাতি গভীরভাবে শোকে মুহ্যমান। কিন্তু, তার এ কথা মিথ্যা। এর সর্বৈব মিথ্যা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানের সমর্থকদের জন্য কোন স্থান নেই। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তাতে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তাতে ১৯৭১ সালে ‘পাকিস্তানকে সমর্থন করা’কে কোথাও অপরাধ হিসেবে দেখানো হয় নি।


এতে রয়েছে হত্যা, অনেক নারী-পুরুষ ও শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ। এসব হচ্ছে জঘন্যতম অপরাধ। এর জন্য তার বিচার হয়েছে। তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফাঁসি দেয়া হয়েছে। নিসার আলী খান একজন মওসুমি রাজনীতিক। তিনি নিশ্চয়ই জানেন যে, দেশপ্রেম দেখাতে ও একীভূত দেশের পক্ষে সমর্থন জানানোর জন্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের চেয়েও উত্তম পন্থা আছে। দ্বিতীয়ত, নিসার আলী খানের জ্ঞানের পরিধির জন্য বলতে হয়, বাংলাদেশী কোন নাগরিক তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত একীভূত পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন এটা একটি গর্বের বিষয়। কিন্তু যখন একজন পাকিস্তানি একীভূত ভারতের পক্ষে সমর্থন দেবেন সেক্ষেত্রে তিনি কি বলবেন? তৃতীয়ত, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার নেই পাকিস্তানের। বাংলাদেশে যে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে তা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাংলাদেশীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।


এ বিচার বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। এখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে মৃত্যুদণ্ডের জন্য জোরালো দাবি উঠেছে। তারপরও বলতে হয়, ঘটনা যদি সেটাও না হয় তাহলেও বলা যায় এটা পাকিস্তানের কোন বিষয় নয়। এটা বাঙালিদের ক্ষোভের বিষয়। এটা তাদের নির্যাতিতদের বিষয়। এটা তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়। এরই মধ্যে এ ঘটনায় বাংলাদেশে পাকিস্তান হাইকমিশনে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাবের। তারা পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাব প্রত্যাহার করার দাবি করেছেন। জাতি কখনও খুনি ও ধর্ষকের পক্ষে থাকতে পারে না।

No comments:

Post a Comment