2013-12-15

হিংসার জবাবে সাদা পতাকায় সতর্কবার্তা ব্যবসায়ীদের



 

সাদা পতাকা হাতে হাতে রাজপথে নেমে এসে হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতার প্রতিবাদ জানালেন ব্যবসায়ীরা, চাইলেন শান্তি, ঐক্য ও রাজনৈতিক সমঝোতা।

রোববার জামায়াতে ইসলামীর হরতাল-নাশকতার মধ্যেই নিরাপত্তার দাবি নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী।
 সকাল ১১টায় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ভবনের সামনে মানববন্ধনের পর ব্যবসায়ীদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শেষ হয় মতিঝিলের এফবিসিসিআই ভবনের সামনে গিয়ে।

বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নিজস্ব ব্যানার আর সাদা পতাকা নিয়ে একই সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এ কর্মসূচিতে যোগ দেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী।

একই সময়ে সাদা পতাকা হাতে মিছিল হয় রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুর এবং দেশের সব জেলা শহরেও। ব্যবসায়ীরা এ কর্মসূচিকে বলছেন ‘প্রতিবাদ-বন্ধন’।

মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনের সামনে এক সমাবেশে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রধান দুই দলের কাছে একটা বার্তা গেল। আমরা বলতে চাই, ব্যবসায়ীরা শান্তি চায়। শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে ব্যবসায়ীরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”

এই ব্যবসায়ী নেতা বরেন, দুই দল সমঝোতায় এলে জাতির জন্য শান্তি আসবে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানও সম্ভব হবে।
 “আমরা হরতাল-অবরোধমুক্ত বাংলাদেশ চাই, আমরা সবার জন্য শান্তি চাই, সব সহিংসতার অবসান চাই।”

মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত এলাকা এ সময় স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরা সাদা পতাকা তুলে কণ্ঠ মেলান- ‘শান্তি চাই, শান্তি চাই’।

হরতাল-অবরোধেও সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে জানিয়ে সরকারের কাছে নিরাপত্তা চান এফবিসিসিআই সভাপতি।

কাজী আকরাম বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অনেকেই ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছেন না।

কোনো ব্যবসায়ী ঋণের কিস্তি শোধ করতে ব্যর্থ হলে আপাতত তাকে ঋণখেলাপী ঘোষণা না করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  
 নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দেশের প্রধান দুই দলের মতানৈক্যের মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে বিরোধী দলের টানা হরতাল ও অবরোধে প্রতিদিন কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

পরিবহন মালিকদের দেয়া হিসেবে, গত এক বছরে হরতাল ও অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রায় ৮০০টি গাড়ি এবং ভাংচুরের শিকার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার গাড়ি। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৪ কোটি টাকা।

রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলকে আলোচনায় বসাতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দুটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।

এরপর জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর মধ্যস্ততায় প্রধান দুই দল আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়।

এ প্রসঙ্গ টেনে কাজী আকরাম বলেন, “তারা আমাদের কথা শোনেননি। শুনেছেন বিদেশিদের কথা। আমাদের কথার মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের যাতে মূল্যায়ন করা হয়, সেজন্য আমাদের আরো কঠোর হতে হবে।”

তারপরও এই সংলাপ সফল হবে বলেই তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সারা দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অর্থনীতি সংকটাপন্ন; মৃতপ্রায়। আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। দরকার হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেব। আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন।”



এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, মীর নাসির হোসেন, আনিসুল হক, এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলামও এই সমাবেশে বক্তেব্য দেন। তারা সবাই রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সালমান এফ রহমান রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা ব্যর্থ হলে দেশের নেতৃত্ব আমাদের নিতে হবে। আজ আমরা শুধু এটাই দেখালাম, ব্যবসায়ীরা শান্তির জন্য ঐকবদ্ধ। আমরা আপনাদের(রাজনীতিবিদদের) শ্রদ্ধা করি। কিন্তু যেভাবে দেশ চলছে তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।”

মীর নাসির হোসেন বলেন, “এই বাংলাদেশ দেখার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন আর সময়ক্ষেপণ করবেন না। সমাধান বের করেন। মানুষ বাঁচান। ব্যর্থ হলে ক্ষমা পাবেন না।”

আনিসুল হক বলেন, “এখন যে বাংলাদেশ দেখছি তা আমরা চিনি না। সবকিছু সীমার বাইরে চলে গেছে।… এটা কি বাংলাদেশ না সোমালিয়া? ইরাক না লিবিয়া?”

দুই নেত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা দুজন আমাদের নেত্রী, আপনারা দুজন মা। আপনাদের কাছে আবেদন, স্বার্থের উপরে উঠে আসুন।”
 এ কে আজাদ বলেন, “আন্দোলন না করে আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের দ্বন্দ্ব সমাধান করুন। আমাদের পুড়িয়ে লাশ বানিয়ে রাজনীতি করবেন না।”

আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অসুস্থ রাজনীতির’ জন্য দেশের শিল্প-বাণিজ্যও ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষ এই রাজনীতি চায় না।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন।

ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, কভার্ড ভ্যান ও ট্রাক মালিক সমিতি এবং গার্মেন্ট একজিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশনও এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

No comments:

Post a Comment