ব্লগওয়াচ
বিশ্বজিৎ হত্যার রায় এবং কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হওয়া – এই দুটি বিষয় নিয়ে ফেসবুক ও ব্লগে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছেন৷ তাদের প্রতিক্রিয়ার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো৷
সামহয়্যার ইন ব্লগে আব্দুর রহমান মিল্টন লিখেছেন, ‘‘বিশ্বজিৎ দাসের পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে বলে মনে করছি, রায়ে আমি খুশি৷'' আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায়ে আট জনকে ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ এই রায় প্রদানের জন্য আদালত ও আওয়ামী লীগ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মিল্টন৷ ‘‘এখন দণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকর করুন! এই খুনীদের কোনো ছাড় নয়, কোনো অনুকম্পা নয়৷ ....আমি আর দশটা হত্যাকাণ্ডের সাথে এই হত্যা মেলাতে পারিনি, তাই আমি বিশ্বজিৎ দাসকে ধারণ করতে চেয়েছি আমার হৃদয়ে৷''
একই ব্লগে এম আই এইচ রাজন রায়ের তথ্য তুলে ধরে বিশ্বজিৎকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা উল্লেখ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘গত বছর ৯ ডিসেম্বর সকালে পুরান ঢাকার ৫৩ নম্বর ঋষিকেশ দাস রোডের বাসা থেকে তাঁতীবাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে দর্জির কাজ করা বিশ্বজিৎ দাসকে পুরান ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপানো হয়৷ এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে মৃত্যু হয় তার৷''
একই বিষয় নিয়ে ফেসবুকে নাহিদ দীপা লিখেছেন, ‘‘যাক, বিশ্বজিৎ হত্যার রায় হলো, এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষা৷'' রুহুল মাহফুজ জয় লিখেছেন, ‘‘বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার হলো৷ সরকারকে ধন্যবাদ৷ এবার সাগর-রুনি ভাবির হত্যাকারী, ত্বকীর হত্যাকারীর বিচার হোক৷ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হোক বাংলাদেশে...অপরাধীরা আতঙ্কে থাকুক৷''
প্রসঙ্গ পাকিস্তান
সামহয়্যার ইন ব্লগে হাবিবুর রহমান জুয়েলের পোস্টের শিরোনাম, ‘‘পাকিস্তান সাবধান৷'' তিনি লিখেছেন, ‘‘একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের বিষয়ে এভাবে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সিদ্বান্ত গ্রহণের স্পর্ধা দেখে আমরা মর্মাহত৷ আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি৷...১৯৭১ সালে যে বাঙালিদের আপনারা দেখেছিলেন, ২০১৩'য় এসে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সেই বাঙালি আরও এক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী হয়েছে৷ সুতরাং সাবধান৷ ১৯৭১ এ লেগেছিল ৯ মাস, ২০১৩ তে লাগবে মাত্র ৯দিন৷''
একই ব্লগে সুফিয়া লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ স্বাধীন হবার ৪২ বছর পর হলেও আমরা স্বাধীনতার বুকে আঁকা কলঙ্ক তিলক মুছে ফেলার সফল উদ্যোগ শুরু করতে পেরেছি৷ দেশের প্রচলিত আইনে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মিরপুরের কসাই খ্যাত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করতে পেরেছি৷ এর মধ্য দিয়ে আমাদের দ্বিতীয় বিজয়ের পথ সূচিত হলো৷...অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীরা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা –এই শ্লোগান মানুষের মুখে মুখে উঠে এলেও কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হবার পর পাকিস্তান পার্লামেন্টে তার জন্য শোক প্রস্তাব এই কথাটি আর একবার প্রমাণ করে দিল৷
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করায় নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়৷ অর্থাৎ ‘কসাই কাদের মোল্লা'কেই যে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে তার বিশ্বাসযোগ্য সার্টিফিকেটটা দিয়েছে পাকিস্তান পার্লামেন্ট৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক ও কড়া প্রতিবাদ পাবার পর পাকিস্তান সহজে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে বলে মনে হয় না৷''
তুহিন সরকার তাঁর ব্লগের শিরোনাম দিয়েছেন, ‘পাকিস্তানের আসল রূপ!' লিখেছেন, ‘‘১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় উদযাপনের প্রাক্কালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে আবদুল কাদের মোল্লার (কসাই কাদের) ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে৷ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে সমর্থন, পাকিস্তানের নগ্নরূপ আবারো জাতির কাছে প্রকাশ৷ সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগী পাকিস্তানকে বিশ্বাস করা যায় না৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘গতকাল মঙ্গলবার সময় টেলিভিশনে সম্পাদকীয়তে সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বললেন, এই নিন্দা প্রস্তাবগুলোকে আমাদের ইগনোর করতে হবে৷'' ব্লগার তুহিন সরকারের প্রশ্ন, ‘‘আর কত ইগনোর করবো? দীর্ঘ ৪২ বছরতো ঐ সন্ত্রাসীগুলোকে ইগনোর করলাম, আর আমাদের ইগনোরের ফলাফলই হচ্ছে ওদের ক্ষমতার উৎস৷ জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে তা পরিষ্কার৷ এখন প্রতিরোধের সময়, সন্ত্রাসীগুলোকে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার সময়৷ আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের শত্রু জামায়াত-শিবিরসহ অন্যান্য কুচক্রী মহলকে প্রতিহত করি৷''
আহমেদ রশীদের পোস্টের শিরোনাম, ‘‘অবশেষে প্রমাণিত হলো বিএনপি-জামাত পাকিস্তানের এজেন্ট৷'' তিনি লিখেছেন, ‘‘পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছে কাদের মোল্লার পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসা ছিল, সে আমাদের বন্ধু৷ তাহলে বুঝতে হবে এই জামায়াতে ইসলাম কি বাংলাদেশি না পাকিস্তানি? এটা সকলের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷...সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হলো, জামাত-বিএনপি এরা আমাদের দেশের নয়, এরা সম্পূর্ণ পাকিস্তানি৷ তাই পাকিস্তানের এজেন্টদের এ দেশে ঠাঁই নেই৷ এ দেশ থেকে তাদের দূর করতে হবে৷ পাকিস্তানি যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে অবিলম্বে সেগুলো নিষিদ্ধ করা বড় জরুরি৷ এছাড়া পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় এ দেশ থেকে উৎখাত করতে হবে৷ তাদের বংশধর এদেশে রাখলে হয়তো বাংলাদেশ বড় ধরণের হুমকির সম্মুখীন হতে পারে এবং বড় ধরণের নাশকতা করতে পারে৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: জাহিদুল হক
No comments:
Post a Comment