2013-12-19

কূটনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন সংঘাত চরমে

 

কূটনৈতিক শিষ্টাচার নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটন সংঘাত চরমে

নিউইয়র্কের ভারতীয় কূটনীতিককে গ্রেপ্তার এবং হেনস্থা করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের বিরোধ এখন চরমে৷ ভারত এর প্রতিবাদে পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সংসদে দলমত নির্বিশেষে সবাই এই ঘটনাকে ধিক্কার জানান৷


নিউইয়র্কে কর্মরত ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবড়াগাড়েকে যেভাবে রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার এবং হেনস্থা করা হয়, তা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিপরীত৷ দেবযানীকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গিয়ে জামাকাপড় খুলিয়ে দেহ তল্লাশি করা হয় এবং তাঁকে রাখা হয় দাগি আসামি এবং মাদকাসক্তদের সেলে৷ তারপর ভারতীয় মুদ্রায় আড়াই কোটি টাকার মুচলেকা দিয়ে তাঁকে জামিন দেয়া হয়, এমনটাই অভিযোগ৷ বছর উনচল্লিশের এই মহিলা কূটনীতিককে হেনস্থার ইস্যুতে সরকার সংসদে জানায় যে, তাঁকে ভারতে ফেরৎ আনার সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং সংবাদ মাধ্যমকে বলেন এটা অত্যন্ত দু:খজনক ঘটনা৷ দেবযানীকে সসম্মানে ভারতে ফিরিয়ে আনার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ বিষয়টি সংসদে উঠলে দলমত নির্বিশেষে সব সাংসদ ধিক্কার জানিয়ে ভারতে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে পাল্টা কড়া ব্যবস্থা নেবার দাবি জানান৷
                                                       বিক্ষোভ করছেন সাধারণ নাগরিক

 গ্রেপ্তারি বিতর্কে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে সরকার প্রথমেই চানক্যপুরি এলাকায় মার্কিন দুতাবাসের সামনে থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তুলে নেয়৷ যে-কোনো লোক এখন সেখানে গাড়ি পার্ক করতে পারবে৷

মার্কিন প্রশাসনের এই ধরণের আচরণ গোটা দেশের প্রতি অপমান মনে করে নতুন দিল্লির মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখানেই থেমে থাকেনি৷ মার্কিন কূটনীতিকদের বিনা পরীক্ষায় বিমানবন্দরে ঢোকার এবং বার হবার জন্য যে বিশেষ পাস দেয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেয়৷ নতুন দিল্লির মার্কিন কূটনীতিক ও তাঁদের পরিবারের কূটনৈতিক পরিচয়পত্র অবিলম্বে জমা দেবার নির্দেশ জারি করা হয়৷ দিল্লির মার্কিন দূতাবাসে এবং মার্কিন কূটনীতিকদের বাড়িতে যেসব ভারতীয় কাজ করেন, তাঁদের বেতন স্লিপ জমা দিতে বলা হয়েছে৷

বিরোধ স্রেফ কূটনৈতিক স্তরে থেমে থাকেনি৷ রাজনৈতিক বার্তা দিতে ভারত সফররত মার্কিন সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে দেন সংসদের স্পিকার মীরা কুমার, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, উপ-সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডে প্রমুখ৷ মনমোহন সিং সরকারের পাল্টা ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে বিজেপি সাংসদ যশবন্ত সিনহার অভিযোগ, যদি ধরে নেয়া যায় দেবযানী মার্কিন আইন লঙ্ঘন করেছেন, তাহলে ভারতের অভ্যন্তরীণ আইন অনুসারে সমকামিতা অপরাধ৷ অথচ কয়েকজন মার্কিন কূটনীতিক সমকামী সঙ্গিদের সঙ্গে এনেছেন৷
তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের ভাষায়, ‘‘নিজেকে বিশ্বের লোকপাল মনে করার অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই৷'' কংগ্রেস সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথের মন্তব্য, ‘‘ভারত ব্যানানা রিপাবলিক নয়৷'' পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমান খুরশিদ এই ঘটনাকে দেবযানীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের মতে, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে তাঁকে যেভাবে গ্রেপ্তার করে জামাকাপড় খুলিয়ে দেহ তল্লাশি করা হয়, তা বর্বরোচিত আচরণ৷
দেবযানীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ
 



                                             নিউইয়র্কের ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানীকে গ্রেপ্তার

মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, ২০১২ সালে নিউইয়র্কে ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে যোগ দিয়ে ভারত থেকে একজন পরিচারিকাকে ‘জাল ভিসায়' নিয়ে যান দেবযানী এবং মার্কিন আইন অনুসারে ন্যূনতম মজুরি থেকে কম বেতন দিতেন তিনি৷ ভিয়েনা কনভেনশনে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ বা শিষ্টাচারের যে সংস্থান আছে, সেই প্রসঙ্গে মার্কিন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দেবযানী এরমধ্যে পড়েন না৷ যা করা হয়েছে মার্কিন আইন মেনেই তা করা হয়েছে৷ উল্লেখ্য, জামা জুতো খুলিয়ে দেহ তল্লাশির ঘটনা এই প্রথম নয়৷ এর আগে এ থেকে রেহাই পাননি এমনকি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম, প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ থেকে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান৷
ভারতের জনমত বলছে, এই ধরণের অপমানজনক ব্যবহারের উপযুক্ত জবাব না দিলে বিশ্ব ভারতকে মাড়িয়ে যাবে৷ বিদেশি দেশগুলির জন্য ভারতের আইন আরো কঠোর করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো দেশ ভারতীয় কূটনীতিককে ব্ল্যাকমেল ও হেনস্থা করতে না পারে৷ নিন্দুকরা অবশ্য বলছেন, সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মনমোহন সিং নিজের দুর্বল সরকারের তকমাটা ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন৷

No comments:

Post a Comment